বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়াতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশে সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে দুই রাষ্ট্রপ্রধান এই বিষয়ে জোর দেন।
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ তাদের স্বাগত জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সাক্ষাতের সময় দুই রাষ্ট্রপতি দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এসময় তারা এ ব্যাপারে দুই দেশেরই যৌথ উদ্যোগ আশা করেন।’
প্রেস সচিব বলেন, সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় বছর। কারণ, এই বছরে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের খুব কাছের এবং বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র।’ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তা আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাণী পাঠিয়ে এবং এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সশরীরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকায় কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে ‘মৈত্রী উৎসব’ পালন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণ একে অপরের ইতিহাস আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।’’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ—এসব খাতে দুদেশের সম্পর্ক অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। দুদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে।’
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নে কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।’ তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন সম্প্রসারণে দুদেশ একযোগে কাজ করলে এ বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত হবে।’
রাষ্ট্রপতি আশা করেন, দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সাক্ষাতের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশে আসতে পেরে তিনি গর্বিত।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে অভিহিত করেন কোবিন্দ।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক।’
তিনি বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ‘টেস্টিমনি’।
রামনাথ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক ও প্রকল্প সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দুদেশের বাণিজ্য যাতে আরও বাড়ে সে ব্যাপারেও তার দেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন পথে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
করোনাভাইরাস মহামারিতে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘এর মাধ্যমে দুদেশ একযোগে কাজ করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাস সরকারসহ দু’দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের রাষ্ট্রপতি।
এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে গালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যান কোবিন্দ।
বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের রেপ্লিকা রাষ্ট্রপতিকে উপহার হিসেবে দেন। পরে বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইতে সই করেন রামনাথ কোবিন্দ।